শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

ডিভোর্সি ও বিধবা বিয়ে প্রসঙ্গে ইসলাম

ডিভোর্সি ও বিধবা বিয়ে প্রসঙ্গে ইসলাম

স্বদেশ ডেস্ক:  আমাদের সমাজে ডিভোর্সি, বিধবা এবং বয়স হয়ে যাওয়া মেয়েদের ভিন্নতর চোখে দেখা হয়। এই তিন শ্রেণির মেয়েদের প্রতি আচার-আচরণ এমনভাবে করা হয়, মনে হয়- তারা যেনো জীবনের সবচেয়ে জঘন্য পাপ কাজটি করেছে। তাদের ভবিষ্যত, তাদের ইচ্ছা, তাদের রুচি ইত্যাদি নিয়ে অনেক পরিবারেই ভাবা হয় না। ফলে তাদের মানবেতর জীবন কাটাতে হয়।
আলোচনার শুরুতে বলে রাখি, সব ডিভোর্স কাহিনী সমান নয়। চরিত্রহীন বলেই ডিভোর্সের ঘটনা ঘটেছে, কিংবা নারী ডিভোর্সি হলেই সে চরিত্রহীন হবেন, এমনটাও ভাবা কাম্য নয়। আর স্বামীর মৃত্যুর জন্য (হত্যার ঘটনা না হলে) কোনো অবস্থাতেই স্ত্রীকে দায়ী করা যায় না। ডিভোর্স যেকোনো কারণে হতে পারে, এটাকে স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া দরকার। তবে হ্যাঁ, ইসলাম কখনও ডিভোর্সকে উৎসাহ দেয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক সর্বনিম্ন জায়েজ কাজ। তাই নারী-পুরুষ উভয়ের কর্তব্য তালাক থেকে দূরে থাকা।
হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার কাছে সবচেয়ে অপ্রিয় হালাল বস্তু হচ্ছে তালাক।’ –সুনানে আবু দাউদ: ২১৭৭
আমার জানা-শোনা ও চেনা অনেক দ্বীনদার মেয়ে আছেন, যারা দ্বীনদার ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তাদের বয়স হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক দ্বীনি বোন আছেন, যারা স্বামীকে ইসলামের পথে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ আবার শারীরিকভাবে অক্ষম, এ কারণে বিচ্ছেদ হয়েছে। এ কারণগুলো তো আর তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।
একবার এক মেয়ের বাবা অনেকটা আপেক্ষ নিয়ে বলেছিলেন, ছেলের সমস্ত যোগ্যতা রয়েছে। শুধু টাখনুর নিচে প্যান্ট পড়ার কারণে তার মেয়ে বিয়েতে রাজি হয়নি। এমন কারণে বয়স বেশি হতে পারে, এটাকে স্বাভাবিক বিষয় বলেই ধরে নিতে হবে। এখানে অন্য অর্থ খোঁজা কাম্য নয়।
আমাদের সমাজ কিংবা পরিবারের লোকজন কোনোভাবেই ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করাতে চায় না। এটাকে সংসারের জন্য অনিষ্টকরভাবে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ইসলামের ইতিহাসে আছে, অনেক সাহাবি শুধুমাত্র সওয়াবের নিয়তে এই আশায় থাকতেন, কোনো বিধবা কিংবা ডিভোর্সি নারী আছে কিনা- যাকে বিয়ে করা যায়। আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও একাধিক বিধবা ও ডিভোর্সি নারী বিয়ে করেছেন।
নবী ও সাহাবিরা যেখানে বিধবা ও ডিভোর্সিদের সম্মান দিয়েছেন, বিয়ে করে তাদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ জীবন দিয়েছেন, সেখানে আমাদের সমাজে ডিভোর্সি কিংবা বিধবা মেয়েদের খারাপ চোখে দেখার প্রবণতা অবশ্যই মন্দ কাজ, পাপের কারণ। স্বামীর মৃত্যুর কারণে কিংবা ডিভোর্সের কারণে কোনো মেয়েকে অপয়া, অলক্ষ্মী, চরিত্রহীন গালি দেওয়া অনুচিত।
প্রায়ই দেখা যায়, অল্প বয়সে কোনো নারী বিধবা হলে কিংবা ডিভোর্স হলে তাকে আবার বিয়ে দেওয়ার কথা অনেকে ভাবে না। ভাবে না তার নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্বের কথা। অথচ তারও নিজের জীবন বলে কিছু আছে। এগুলো নিয়ে সামাজিকতার নামে প্রচলিত কুসংস্কার ভেঙে নিজ নিজ পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও সমাজকে ভাবতে হবে। আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন। ইসলামের রীতি অনুযায়ী বিধবা ও ডিভোর্সি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলকে সচেতন হতে হবে।
মনে রাখতে হবে, ইসলামি শরিয়তে পুরুষের জন্য একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। কিন্তু এটি কিছুতেই শর্তহীন নয়। বরং ভরণপোষণ, আবাসন ও শয্যাযাপনের ক্ষেত্রে শতভাগ সমতাবিধান নিশ্চিত করা না গেলে একসঙ্গে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ বৈধ নয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877